আর ১ হাজার ডলার
মাসুদ শায়ান
বহুল আলোচিত পদ্মা সেতু প্রকল্প এখন অনিশ্চয়তার দোলাচলে দুলছে। বিশ্বব্যাংক, এডিবি ও জাইকা প্রকল্পের অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার পর এখন অর্থায়ন নিয়ে বিভিন্ন সমীকরণ হচ্ছে। এর মধ্যে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, গতকাল পর্যন্ত দুটি একাউন্টের একটিতে জমা পড়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৩৪৫ টাকা ১৬ পয়সা। আর অনিবাসী বা বিদেশি হিসাবে জমা পড়েছে মাত্র এক হাজার ডলার। পদ্মা সেতু প্রকল্পে নিজস্ব অর্থায়নে সাধারণ মানুষের সাড়া মেলেনি। ২৯০ কোটি ইউএস ডলারের এ প্রকল্পে এ সামান্য অর্থ ভাবাই যায় না। সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কথা বললেও আদৌ নিজস্ব অর্থায়নে সেতু নির্মাণের অর্থের সংস্থান করা সম্ভব হবে কিনা এ নিয়ে আশাবাদী নন সংশ্লিষ্টরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, এ দুটি একাউন্টে এত কম টাকা জমা হয়েছে যে এ নিয়ে আমরা কোনো তথ্য দিতে বেশ বিব্রতবোধ করি। এরপরও সাংবাদিকরা চাইলে তো তথ্য দিতে আমরা বাধ্য। বিশ্বব্যাংক অর্থ না দিলে 'প্রয়োজনে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করা হবে' প্রধানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পর গত আগস্ট মাসে তফসিলি ব্যাংকগুলোতে দুটি করে হিসাব খোলা হয়। তারপর ৭ মাস শেষ হতে চলল। অথচ অনুদান জমা পড়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৩৪৫ টাকা ১৬ পয়সা। আর বিদেশি হিসাবে জমা পড়েছে এক হাজার ডলার। এতে অনুমান করা যায় নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ অসম্ভব।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সোনালী ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হয়ে পদ্মা সেতুর এ হিসাব পরিচালনা করছে সোনালী ব্যাংক। অক্টোবর পর্যন্ত তিন মাসে তহবিলে সব মিলিয়ে জমা হয়েছিলো ৬৩ হাজার ৩৪৬ টাকা। নভেম্বর মাসে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ৮৮ হাজার ৬৬ টাকা। ডিসেম্বর মাসে ৯৯ হাজার ৭৬৫ টাকা ৭৭ পয়সা। আর জানুয়ারি শেষে তা ১ লাখ ২ হাজার ৩৪৫ টাকা ১৬ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। আর অনিবাসি একটি হিসাবে বিভিন্ন জন মাত্র ১ হাজার মার্কিন ডলার জমা দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সে সময় সরকার এ নিয়ে আরো প্রচারণা চালালে অর্থ আরো বেড়ে যেতো। কিন্তু এখন এ নিয়ে প্রচার প্রচারণা চালালে কোন সুফল পাওয়া যাবে কিনা সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ।
এদিকে, পদ্মা সেতুর জন্য সাধারণ মানুষের অনুদান প্রদানে যখন আগ্রহ নেই। অর্থমন্ত্রী বলেছেন, খরচ কমাতে রেল লাইন ছাড়াই কেবল সড়ক সেতু নির্মাণ কাজ ফেব্রুয়ারিতে শুরুর প্রক্রিয়া চলছে। জানুয়ারি পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যমতে, এ হিসাবে মোট জমা হয়েছে এক লাখ ২ হাজার ৩৪৫ টাকা ১৬ পয়সা। আর অনিবাসী তহবিলে
১ হাজার ডলারের পর নতুন করে আর কোন অর্থ জমা পড়েনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বিশ্বব্যাংকের পর এডিবি এবং জাইকা সরে যাওয়ায় সরকার বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছে। বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর ২৯০ কোটি ডলারের মধ্যে ১২০ কোটি ডলার দেয়ার কথা ছিলো বাকী টাকা এডিবি, জাইকা এবং আইডিবির দেওয়ার কথা ছিলো। এখন আইডিবি ছাড়া অন্য সব দাতা পদ্মা সেতুর অর্থায়ন থেকে সরে যাওয়ার পর দাতাদের অর্থে আপতত পদ্মা সেতু হচ্ছে না। জানা গেছে, সাধারণ মানুষের সাড়া না মিললেও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থ জমা দিয়েছেন আমলারা। গত ১৬ জুলাই মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অর্থ সংগ্রহের লক্ষ্যে দুটি ব্যাংক হিসাব খোলার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর গত ৫ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয় একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। ৮ আগস্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত দুটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর পরই সব তফসিলি ব্যাংক দুটি করে ব্যাংক হিসাব খোলে। একটি হিসাব স্থানীয় মুদ্রায়,অন্যটি বিদেশি মুদ্রায়। অনিবাসীরাও এ তহবিলে অর্থ প্রদানে কোন সারাই দেয়নি। সরকারের শেষ সময়ে এসে এখন এ দুটি একাউন্টে সাধারণ মানুষ কতটা সারা দেবে সেটাই এখন প্রশ্নের বিষয়।
No comments:
Post a Comment